প্রকাশিত: Thu, Feb 9, 2023 4:53 PM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 1:23 PM

কর্তৃত্বপরায়ন শাসক, ধান্ধাবাজ ব্যবসায়ী এবং নিষেধাজ্ঞা-সতর্ক সংকেত

কাকন রেজা : যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সাথে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুতিনের কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যবসায়ীর উপর। কর্তৃত্বপরায়ন শাসকেরা সঙ্গতই দুর্নীতিপরায়ন হয়। আর সেই দুর্নীতির অংশীদার হয় একটা ব্যবসায়ী চক্র। বিশেষ করে কমিশন, দেশের বাইরে টাকা পাচার ও সম্পদ বিষয়ে এই চক্রের প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী। ফ্যাসিজম আক্রান্ত দেশে দেশে তাই হয়ে এসেছে এ যাবতকাল। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র বুঝে শুনেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মোদি রেজিমে ভারতে অবিশ্বাস্য উত্থান ঘটেছে ব্যবসায়ী গৌতম আদানির। অসম্ভব দ্রুত গতিতে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর পর্যায়ে পৌঁছেছেন এক দশক  আগেও কর্পোরেট বিশ্বের মেইনস্ট্রিমে অনেকটাই অপরিচিত এই ব্যবসায়ী। আদানির উত্থান পর্বের সাথেও কর্তৃত্বপরায়ন দুর্নীতিবাজ শাসকদের রেজিমের ধরন মিলে যায়। 

প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ একটা মিল রয়েছে পুরো ব্যাপারটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত পদক্ষেপের। রাশিয়ার ডলারের বড় যোগানদাতা হলো ভারত। রাশিয়া থেকে প্রচুর তেল কিনছে দেশটি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র খুশি নয় ভারতের চলতি রেজিমের প্রতি, অন্তত ইশারা তাই জানান দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন দক্ষিণ এশিয়ায় মিত্র হিসেবে থাকা দেশটিকে সম্ভবত এখনই বৈরি তালিকায় ফেলতে চায় না বাইডেন প্রশাসন। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় কর্তৃত্ব আর ভারতের উপর দিতে চাইছে না দেশটি। সামগ্রিক ঘটনা প্রবাহ ও আদানির আকস্মিক পতন সম্ভবত সে কথাই বলে। 

হঠাৎ করেই জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আদানির ব্যাপারে। এতেই অল্প দিনেই দশ হাজার কোটি ডলার হারায় আদানির ব্যবসায়ী গ্রুপ। ধনীর তালিকায় এক ধাক্কায় নেমে আসেন আদানি দশ নম্বরে। গণমাধ্যমের কল্যাণে মোদি রেজিম কীভাবে আদানিকে ব্যবসায়িক সুবিধা দিয়েছে এসব ব্যাপারে যারা খোঁজখবর রাখেন তা তাদের জানা। সুতরাং এসব বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আদানির স্বার্থরক্ষায় খোদ আইন পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে এমনটাও বলা হয়। হিন্ডেনবার্গ একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে আদানির চরম উত্থানে। যেভাবে দ্রুত তার উত্থান ঘটেছিলো, পতনও যে তারচেয়ে দ্রুত হতে পারে তাই জানান দিয়েছে সেই রিপোর্ট। অনেকেই ধারণা করতে পারেন এবং করেন এর পেছনে রয়েছে অন্য কাহিনী। যা মূলত সতর্ক সংকেত এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। 

আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসেবে এটা অনেকটাই পরিষ্কার,  যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের দীর্ঘদিনের মধুর সম্পর্কটা ঠিক আগের মতো নেই। হালে আমাদের দেশের অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মান-অভিমান পর্ব শেষ হয়েছে এবং সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রতি অনেকটাই নমনীয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোনো বোকা-বোকা কোনো প্রেমকাহিনী নয়, যেখানে মান-অভিমানের মতন আবেগী বিষয় জায়গা পাবে। যারা ভাবেন তারা আসলে রয়েছেন ফিকশনেই। কিন্তু যা ঘটতে যাচ্ছে তা ননফিকশন। আদানির সতর্ক সংকেত শুধু আদানির জন্যই নয় এটা বোঝার মতন ঘটে ‘গ্রে মেটার’ থাকতে হবে। বুঝতে হবে, রাশিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি নিষেধাজ্ঞার কারণ। বুঝতে এবং মনে রাখতে হবে আপাত শান্ত আবহাওয়া মানে পরবর্তী ঝড়ের পূর্ব লক্ষণ। 

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক